০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কৃষকের সর্বনাশ করে সরকারি টাকায় নিজ পুকুরে যেতে রাস্তা বানালেন ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা।

স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ কেফায়েত উল্লাহ শরীফ
  • Update Time : ১১:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৯ Time View

কৃষকের সর্বনাশ করে সরকারি টাকায় নিজ পুকুরে যেতে রাস্তা বানালেন ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা।

স্টাফ রিপোর্টার

 

কৃষকের মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর মাত্র ১৫/২০দিন পর ফসলি জমি থেকে কাটা হবে ইরি ধান। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে কৃষকের লাগানো জমিতে ধান গাছ লাগানো ধ্বংস করে নিজ পুকুরে যাওয়ার রাস্তা বানালেন এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ৪০ বিঘা ফসলি জমি। অথচ কাবিখা প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিরোধপূর্ণ কোন জমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলায় নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে। এই ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটপাড়াড়া বরাক বিলের মাঝ দিয়ে ১০ ফুট প্রসস্থ নতুন একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের শেষ প্রান্তে কোন বাড়িঘর নেই। রয়েছে কয়েকটি পুকুর। সেই পুকুরের মালিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোছাইন এবং তার পরিবারের। নতুন সড়কটি জমিতে লাগানো ধানের গাছ ও জমি ধ্বংস করে বানানো হয়েছে, ফলে সড়কের দুই পাশে গভীর হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। কৃষকরা জানান, সরকারি প্রকল্পের কথা বলে জোরপূর্বক ইউপি সদস্য ইকবাল তার নিজের পুকুরে যেতে এই সড়ক নির্মাণ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। এই ঘটনায় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাবিখা প্রকল্পের টাকায় অনিয়ম করে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন এই প্রকল্প করেছেন। শুধু মাত্র ইউপি সদস্যের কথায় কোন প্রকার পরিদর্শন এবং কৃষকদের মতামত না নিয়ে কৃষি জমির উপর দিয়েই এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কাবিখা প্রকল্পের নিয়ম গাইডলাইনে বলা আছে ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা বিরোধপূর্ণ জমিতে এই প্রকল্প দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শ্রমিক দিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অংশ হলেও এই প্রকল্প বেকু মেশিন দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

 

ওলি মিয়া নামের এক কৃষক জানান, জমিতে যেতে দুই পায়ে যেরে পারে এমন রাস্তা আমরা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী কোন রাস্তা নেই। ইকবাল মেম্বার দুই বছর আগেও জোরপূর্বক এই ছোট রাস্তাটিকে জমি ক্ষতি করে বড় করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীর প্রতিরোধে তা বন্ধ করে দেন। এবার রাতারাতি বেকু দিয়ে সেই রাস্তা করে ফেলছে।

 

ইকরাম খা নামের আরেকজন বলেন, সরকারি রেকর্ডে এই রাস্তা নেই। এই রাস্তা কোন গ্রামে বা বাড়িঘরে যুক্ত হয়নি। শুধু মাত্র ইকবাল মেম্বার তার মালিকানাধীন পুকুর ও জমিতে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে এই রাস্তা তৈরী করেছেন। অথচ ১৫/২০ দিন পর এই ধান গাছে ফসল আসতো, ৩০ দিন পর এই ফসল কেটে বাড়িতে তোলা হতো।

 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, এই রাস্তা বানাতে বেশি জমি পড়েনি। আর বেকু দিয়ে কাটতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস বলেছে, তাই কেটেছি। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেব ডেকেছিলেন, তিনি পরিদর্শনে আসবে। এখন সবাই আপত্তি করায় কাজ বন্ধ রেখেছি।

 

এই বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ওই গ্রামের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন নামে একজন মেম্বার তার পুকুরে যেতে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাস্তা বা ঘরবাড়ি করতে পারে না, এরজন্যে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। ঘটনাটি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি।

 

এই বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূইয়া বলেন, একটি ফসলি জমির উপর রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, তেমন কৃষি জমি সংরক্ষণে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। দেখা হবে রাস্তাটি জনগণের উপকারের কিনা এবং কৃষি জমির কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কৃষকের সর্বনাশ করে সরকারি টাকায় নিজ পুকুরে যেতে রাস্তা বানালেন ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা।

Update Time : ১১:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

কৃষকের সর্বনাশ করে সরকারি টাকায় নিজ পুকুরে যেতে রাস্তা বানালেন ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা।

স্টাফ রিপোর্টার

 

কৃষকের মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর মাত্র ১৫/২০দিন পর ফসলি জমি থেকে কাটা হবে ইরি ধান। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে কৃষকের লাগানো জমিতে ধান গাছ লাগানো ধ্বংস করে নিজ পুকুরে যাওয়ার রাস্তা বানালেন এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ৪০ বিঘা ফসলি জমি। অথচ কাবিখা প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিরোধপূর্ণ কোন জমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলায় নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে। এই ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটপাড়াড়া বরাক বিলের মাঝ দিয়ে ১০ ফুট প্রসস্থ নতুন একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের শেষ প্রান্তে কোন বাড়িঘর নেই। রয়েছে কয়েকটি পুকুর। সেই পুকুরের মালিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোছাইন এবং তার পরিবারের। নতুন সড়কটি জমিতে লাগানো ধানের গাছ ও জমি ধ্বংস করে বানানো হয়েছে, ফলে সড়কের দুই পাশে গভীর হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। কৃষকরা জানান, সরকারি প্রকল্পের কথা বলে জোরপূর্বক ইউপি সদস্য ইকবাল তার নিজের পুকুরে যেতে এই সড়ক নির্মাণ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। এই ঘটনায় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাবিখা প্রকল্পের টাকায় অনিয়ম করে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন এই প্রকল্প করেছেন। শুধু মাত্র ইউপি সদস্যের কথায় কোন প্রকার পরিদর্শন এবং কৃষকদের মতামত না নিয়ে কৃষি জমির উপর দিয়েই এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কাবিখা প্রকল্পের নিয়ম গাইডলাইনে বলা আছে ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা বিরোধপূর্ণ জমিতে এই প্রকল্প দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শ্রমিক দিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অংশ হলেও এই প্রকল্প বেকু মেশিন দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

 

ওলি মিয়া নামের এক কৃষক জানান, জমিতে যেতে দুই পায়ে যেরে পারে এমন রাস্তা আমরা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী কোন রাস্তা নেই। ইকবাল মেম্বার দুই বছর আগেও জোরপূর্বক এই ছোট রাস্তাটিকে জমি ক্ষতি করে বড় করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীর প্রতিরোধে তা বন্ধ করে দেন। এবার রাতারাতি বেকু দিয়ে সেই রাস্তা করে ফেলছে।

 

ইকরাম খা নামের আরেকজন বলেন, সরকারি রেকর্ডে এই রাস্তা নেই। এই রাস্তা কোন গ্রামে বা বাড়িঘরে যুক্ত হয়নি। শুধু মাত্র ইকবাল মেম্বার তার মালিকানাধীন পুকুর ও জমিতে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে এই রাস্তা তৈরী করেছেন। অথচ ১৫/২০ দিন পর এই ধান গাছে ফসল আসতো, ৩০ দিন পর এই ফসল কেটে বাড়িতে তোলা হতো।

 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, এই রাস্তা বানাতে বেশি জমি পড়েনি। আর বেকু দিয়ে কাটতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস বলেছে, তাই কেটেছি। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেব ডেকেছিলেন, তিনি পরিদর্শনে আসবে। এখন সবাই আপত্তি করায় কাজ বন্ধ রেখেছি।

 

এই বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ওই গ্রামের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন নামে একজন মেম্বার তার পুকুরে যেতে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাস্তা বা ঘরবাড়ি করতে পারে না, এরজন্যে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। ঘটনাটি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি।

 

এই বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূইয়া বলেন, একটি ফসলি জমির উপর রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, তেমন কৃষি জমি সংরক্ষণে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। দেখা হবে রাস্তাটি জনগণের উপকারের কিনা এবং কৃষি জমির কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে।