০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চোরাচালানের উত্থান, বিজিবির নজরদারি আরও কড়াকড়ি

জহির শাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২১ Time View

 

জহির শাহ্ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৫ নভেম্বর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তজুড়ে সম্প্রতি চোরাচালান কার্যক্রম উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। বাজারে চাহিদাসম্পন্ন নানা পণ্য অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে প্রতিদিন। সীমান্তের আশপাশে সক্রিয় চোরাকারবারি চক্রগুলো স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণদের ব্যবহার করছে “বহনকারী” হিসেবে। অল্প টাকার প্রলোভনে তারা জড়িয়ে পড়ছে এই ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে।

এ অবস্থায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে নজরদারি ও অভিযান জোরদার করেছে। নিয়মিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক, ভারতীয় পণ্য ও চোরাই মালামাল জব্দ হচ্ছে। বিজিবির দাবি—চোরাচালান রোধে এখন সীমান্তে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার সীমান্তপথগুলো দিয়েই মূলত এই চোরাচালান পরিচালিত হয়। ভারতীয় মাদক, গরুর মাংস, মোবাইল ডিসপ্লে, চশমা, ক্যান্সারের ওষুধ থেকে শুরু করে ফুচকা পর্যন্ত নানা পণ্য চোরাপথে আসছে দেশে। মৌসুমভেদে চোরাচালানের ধরনও বদলায়—কখনো খাদ্যপণ্য, কখনো ইলেকট্রনিকস কিংবা ওষুধ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করে কারণ তারা ভৌগোলিক এলাকা ভালোভাবে জানে এবং বিজিবির টহল টের পেলে দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। অভিযানের সময় অনেকেই পণ্য ফেলে রেখে গা-ঢাকা দেয়।

বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন,

> “চোরাচালানকারীরা এলাকার অল্পবয়সী ছেলেদের ব্যবহার করে থাকে। তারা সীমান্তের প্রতিটি ফাঁকফোকর চেনে। আমাদের টহল দল এগোলে তারা পণ্য ফেলে পালিয়ে যায়। তবু আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং একের পর এক চালান জব্দ করতে পারছি।”

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের ধর্মগড় সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি মাদক ও চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ৪৮ জন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন,

> “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক। সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই অবৈধ পণ্য বা মাদক দেশে প্রবেশ করতে না পারে। বিজিবি ও প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা আরও জোরদার থাকবে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩১ কিলোমিটার এলাকায় দায়িত্বে আছে বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়ন, আর বাকি অংশ তদারকি করছে বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়ন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত অঞ্চলের দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং ভারতীয় পণ্যের সহজলভ্যতাই চোরাচালান বৃদ্ধির মূল কারণ। তবে বিজিবি ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ চলমান থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে—এমন আশাবাদই ব্যক্ত করেছেন তারা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

3542

১০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চোরাচালানের উত্থান, বিজিবির নজরদারি আরও কড়াকড়ি

Update Time : ১২:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

 

জহির শাহ্ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৫ নভেম্বর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তজুড়ে সম্প্রতি চোরাচালান কার্যক্রম উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। বাজারে চাহিদাসম্পন্ন নানা পণ্য অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে প্রতিদিন। সীমান্তের আশপাশে সক্রিয় চোরাকারবারি চক্রগুলো স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণদের ব্যবহার করছে “বহনকারী” হিসেবে। অল্প টাকার প্রলোভনে তারা জড়িয়ে পড়ছে এই ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে।

এ অবস্থায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে নজরদারি ও অভিযান জোরদার করেছে। নিয়মিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক, ভারতীয় পণ্য ও চোরাই মালামাল জব্দ হচ্ছে। বিজিবির দাবি—চোরাচালান রোধে এখন সীমান্তে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার সীমান্তপথগুলো দিয়েই মূলত এই চোরাচালান পরিচালিত হয়। ভারতীয় মাদক, গরুর মাংস, মোবাইল ডিসপ্লে, চশমা, ক্যান্সারের ওষুধ থেকে শুরু করে ফুচকা পর্যন্ত নানা পণ্য চোরাপথে আসছে দেশে। মৌসুমভেদে চোরাচালানের ধরনও বদলায়—কখনো খাদ্যপণ্য, কখনো ইলেকট্রনিকস কিংবা ওষুধ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করে কারণ তারা ভৌগোলিক এলাকা ভালোভাবে জানে এবং বিজিবির টহল টের পেলে দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে। অভিযানের সময় অনেকেই পণ্য ফেলে রেখে গা-ঢাকা দেয়।

বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন,

> “চোরাচালানকারীরা এলাকার অল্পবয়সী ছেলেদের ব্যবহার করে থাকে। তারা সীমান্তের প্রতিটি ফাঁকফোকর চেনে। আমাদের টহল দল এগোলে তারা পণ্য ফেলে পালিয়ে যায়। তবু আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং একের পর এক চালান জব্দ করতে পারছি।”

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের ধর্মগড় সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি মাদক ও চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ৪৮ জন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন,

> “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক। সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই অবৈধ পণ্য বা মাদক দেশে প্রবেশ করতে না পারে। বিজিবি ও প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা আরও জোরদার থাকবে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩১ কিলোমিটার এলাকায় দায়িত্বে আছে বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়ন, আর বাকি অংশ তদারকি করছে বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়ন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত অঞ্চলের দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং ভারতীয় পণ্যের সহজলভ্যতাই চোরাচালান বৃদ্ধির মূল কারণ। তবে বিজিবি ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ চলমান থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে—এমন আশাবাদই ব্যক্ত করেছেন তারা।