০৪:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্যাডেল ঘুরিয়ে স্বাধীনতা ছোঁয় নবীনগরের কিশোরীরা

জহির শাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:১৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৪ Time View

 

জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সকালের কুয়াশা এখনো পুরোপুরি সরেনি, কিন্তু শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় শোনা যাচ্ছে একটানা সাইকেলের ঘণ্টি আর মেয়েদের উচ্ছল কণ্ঠস্বর। দূরের গ্রাম থেকে আসা প্রায় শতাধিক ছাত্রী এখন আর পায়ে হেঁটে আসে না; তারা আসে নিজের হাতে প্যাডেল ঘুরিয়ে, বাতাসে চুল উড়িয়ে।

এই সাইকেলগুলো কেবল যানবাহন নয়, এ যেন গ্রামের মেয়েদের হারানো স্বাধীনতার চাবি।

রসুল্লাবাদের অষ্টম শ্রেণির নাহিদা আক্তার বললেন, “আগে বাবা বা চাচা না থাকলে স্কুলে আসা হতো না। এখন আমি নিজেই বেরিয়ে পড়ি। পথে কেউ দেখলে হাসি দিয়ে বলি—‘চাচা, সরে যান, দেরি হয়ে যাবে!’”

শান্তিপুর, নোয়াগ্রাম, শ্রীঘর, কুড়িনাল—একের পর এক গ্রাম থেকে মেয়েরা এখন সাইকেলে চেপে আসে। আগে যে তিন-চার কিলোমিটার পথ হাঁটতে লাগত আধা ঘণ্টার বেশি, সেই পথ এখন কাটে মাত্র দশ মিনিটে। ফলে ক্লাস শুরুর আগেই বই খুলে বসা যায়, টিফিন খেয়ে আরামে পরের ক্লাসে যাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, “সাইকেল এসেছে বলে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। তারা শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখছে। আমরা তাদের জন্য আলাদা সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, এমনকি রেইনকোটও দিয়েছি।”

নবম শ্রেণির রাশিদা আক্তারের চোখে চকচক করে, “আমার সাইকেলের নাম রেখেছি ‘মুক্তি’। যখন চালাই, মনে হয় আমি উড়ছি।”

গ্রামের অনেক বাবা-মা প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু এখন তারাই মেয়েদের উৎসাহ দেন। নাছিরাবাদের আক্কাছ মিয়া বললেন, “লোকে যা বলার বলুক, আমার মেয়ে যখন সাইকেলে চড়ে স্কুলে যায়, আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়।”

শতবর্ষী এই বিদ্যালয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। সাইকেল এসেছে সরকারি শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে। ফলাফল? একটি ছোট্ট দুচাকার যান গ্রামের মেয়েদের জীবনে এনে দিয়েছে বিরাট পরিবর্তন—তারা এখন শুধু স্কুলে যাচ্ছে না, তারা যাচ্ছে নিজের ভবিষ্যতের দিকে, পুরোদমে প্যাডেল ঘুরিয়ে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

প্যাডেল ঘুরিয়ে স্বাধীনতা ছোঁয় নবীনগরের কিশোরীরা

Update Time : ০৭:১৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

 

জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সকালের কুয়াশা এখনো পুরোপুরি সরেনি, কিন্তু শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় শোনা যাচ্ছে একটানা সাইকেলের ঘণ্টি আর মেয়েদের উচ্ছল কণ্ঠস্বর। দূরের গ্রাম থেকে আসা প্রায় শতাধিক ছাত্রী এখন আর পায়ে হেঁটে আসে না; তারা আসে নিজের হাতে প্যাডেল ঘুরিয়ে, বাতাসে চুল উড়িয়ে।

এই সাইকেলগুলো কেবল যানবাহন নয়, এ যেন গ্রামের মেয়েদের হারানো স্বাধীনতার চাবি।

রসুল্লাবাদের অষ্টম শ্রেণির নাহিদা আক্তার বললেন, “আগে বাবা বা চাচা না থাকলে স্কুলে আসা হতো না। এখন আমি নিজেই বেরিয়ে পড়ি। পথে কেউ দেখলে হাসি দিয়ে বলি—‘চাচা, সরে যান, দেরি হয়ে যাবে!’”

শান্তিপুর, নোয়াগ্রাম, শ্রীঘর, কুড়িনাল—একের পর এক গ্রাম থেকে মেয়েরা এখন সাইকেলে চেপে আসে। আগে যে তিন-চার কিলোমিটার পথ হাঁটতে লাগত আধা ঘণ্টার বেশি, সেই পথ এখন কাটে মাত্র দশ মিনিটে। ফলে ক্লাস শুরুর আগেই বই খুলে বসা যায়, টিফিন খেয়ে আরামে পরের ক্লাসে যাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, “সাইকেল এসেছে বলে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। তারা শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখছে। আমরা তাদের জন্য আলাদা সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, এমনকি রেইনকোটও দিয়েছি।”

নবম শ্রেণির রাশিদা আক্তারের চোখে চকচক করে, “আমার সাইকেলের নাম রেখেছি ‘মুক্তি’। যখন চালাই, মনে হয় আমি উড়ছি।”

গ্রামের অনেক বাবা-মা প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু এখন তারাই মেয়েদের উৎসাহ দেন। নাছিরাবাদের আক্কাছ মিয়া বললেন, “লোকে যা বলার বলুক, আমার মেয়ে যখন সাইকেলে চড়ে স্কুলে যায়, আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়।”

শতবর্ষী এই বিদ্যালয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। সাইকেল এসেছে সরকারি শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে। ফলাফল? একটি ছোট্ট দুচাকার যান গ্রামের মেয়েদের জীবনে এনে দিয়েছে বিরাট পরিবর্তন—তারা এখন শুধু স্কুলে যাচ্ছে না, তারা যাচ্ছে নিজের ভবিষ্যতের দিকে, পুরোদমে প্যাডেল ঘুরিয়ে।